স্বাগতম আনারসের রাজধানীতে
মধুপুর গড় – Madhupur Garh
রিফ্রেশমেন্ট দরকার? চাইলে ঘুরে আসতে পারেন মধুপুর গড় থেকে। ঢাকা হতে প্রায় ১২৫ কিঃমিঃ দূরে এই শহরের অবস্থান।ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনাঞ্চলের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন মধুপুর শালবন।এই ভূমের পাহাড়ি মাটির রং লাল।সেই লাল মাটি আর মাথার উপরে সবুজের সমারোহ;মাঝে পাবেন উপজাতি গারোদের জীবন বৈচিত্র্য।১৯৮২ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষিত বংশী নদীপারের প্রায় ৮৪,৩৬৬ হেক্টরের এই শাল গজারির বনভূমিতে আপনি দেখবেন প্রায় ১১ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, সাত প্রজাতির সরীসৃপ, ৩৮ প্রজাতির পাখি ও কয়েক প্রজাতির উভচর প্রাণী।যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য স্ট্রুর্ক বিলড কিংফিশার বা মেঘ হু, মাছরাঙা, খয়রা গেছো পেচা, কাঠময়ূর, বনমোরগ-মুরগি। আর বনে স্তন্যপায়ী হিসেবে রয়েছে হনুমান, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, লালমুখ বানর, বন্য শূকর,শিয়াল ইত্যাদি।
যা যা দেখতে পারবেন Madhupur Garh/Madhupur National Park এ…
১. মধুপুর_জাতীয় উদ্যান
২. গারো জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা।
৩. দোখালা(এই জায়গার ওয়াচটাওয়ার থেকে মধুপুরের সম্পূর্ণ গড়টা দৃষ্টিগোচর হবে)
৪. পীরগাছা ক্রাইস্ট মিশন ও গির্জা।
৫. প্রাচীন আমলের সামন্ত রাজা ভগবৎ দত্তের দেড় হাজার একরের দিঘী এবং তার পাশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন মন্দির।
৬. গাছের পাতার সাথে বানরের লুকোচুরি;হরিণ এখন বিলুপ্তপ্রায়।
৭. সাত হাজার একরের রাবার বাগানের মাঝেই রাবার প্রসেসিং প্রক্রিয়া।
৮. রসুলপুরের সুদৃশ্য ফায়ারিং চত্তর ও জয়েনশাহী পীরের মাজার।
৯. সময় থাকলে কাকরইদ বিএডিসির চত্তরে চোখ বোলাতে পারেন।
১০. ধনবাড়ীর নওয়াব বাড়ীটা দেখে যেতে পারেন।
১১. সময় থাকলে ডাঃ বেকারের অনুদানে নির্মিত বৃহত্তম কুষ্ঠ ব্যাধি হাসপাতাল টাও দেখতে পারেন।
১১.আনারসের রাজধানী খ্যাত জলছত্রের আনারস বাজার টা দেখবেন না…তা কি করে হয়? মঙ্গলবার আর শুক্রবার মধুপুর এবং জলছত্রের হাটের দিন।
১২. হাওদা বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার মন ছুয়ে যাবে।
তাছাড়া মধুপুরের সকল গ্রামই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। নিমিষেই আপনার হ্নদয় ছুয়ে যাবে।
✅ যাতায়াত ব্যবস্থা।
সরাসরি ঢাকা টাংগাইল হয়ে
আবার ময়মনসিংহ হয়ে আসতে পারবেন।
✅ প্রথম_রাস্তা ঢাকা টাংগাইল
✅ বাস
মহাখালী টার্মিনালে বিনিময় পরিবহনে (ভোরে বাস রয়েছে)সরাসরি (ভাড়া ১৫০/২০০ টাকা) মধুপুর চলে আসতে পারেন।এসে নাস্তা করে নিতে পারেন ৩০/৪০ টাকায়। তাছাড়া টাংগাইল সদরে (ভাড়া ১৫০/১৬০টাকা) আসতে পারেন নিরালা সুপার, ধলেশ্বরী এমন বাস রয়েছে।
✅ ট্রেন
উত্তরবঙ্গগামী প্রায় সকল আন্তঃনগর ট্রেনে আসতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে
ভাড়া ১১৫৳ (শোভন চেয়ার)
স্টেশনে নেমে নাস্তা করতে পারেন ৩০/৪০ টাকায়।
টাংগাইল স্টেশন হতে নতুন বাসস্ট্যান্ড অটোরিকশা ভাড়া ২০ টাকা।তারপর মধুপুরের বাসে চড়ে বসুন ভাড়া ৫০/৭০ টাকা।
✅ মধুপুর বাস স্ট্যান্ড।এখান থেকে আপনি চাইলে ৩-৪ ঘন্টার জন্য মোটরসাইকেল-সি.এন.জি চালিত অটোরিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাড়া পাবেন।উপরিউক্ত জায়গাগুলো(ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ি ছাড়া) ঘুরে দেখবেন বলুন আর সময় টা জানিয়ে দিন।ভাড়া অনেক চাইবে।ঘাবড়ানোর কিছু নেই।৩০০-৫০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।এবার শুরু করুন ঘুরে দেখা।চলছে তো চলছেই।
✅ মধুপুরে চলে আসুন ৩:০০ টার মাঝে।তারপর তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেড়ে নিন ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে।চড়ে বসুন ধনবাড়ীর বাস-লেগুনা-সি.এন.জি তে।ভাড়া নেবে ১০-২০ টাকা।ধনবাড়ী নেমে দ্রুত ভ্যানে করে চলে যান নওয়াব বাড়ি মসজিদের সামনে।ভাড়া ১০-১৫ টাকা।মসজিদ টা দেখুন।চাইলে ৫০ টাকা টিকিট করে নওয়ার বাড়ির ভেতরটাও দেখতে পারেন।আর পাশের নওয়াব আলী চৌধুরির প্রতিষ্ঠিত বিশেষ কারুকার্য সংবলিত ধনবাড়ী নওয়াব ইন্সটিটিউশন স্কুলটাতেও চোখ বোলাতে ভুলবেন না।যাহোক,এ পর্ব খুব দ্রুত সেরে চলে যান ধনবাড়ী বাস স্টেশনে যদি না আপনি এসি বাসে ব্যাক করতে চান।আর তা না হলে একটু সময় নিয়ে দেখতে পারেন।বিকেল ৪টায় ধনবাড়ী থেকে কল্যাণপুরের উদ্যেশ্যে এ.সি. বিনিময় ছেড়ে যায়।টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা। সময় লাগবে ৩.৫থেকে ৪ঘন্টা।এছাড়া চাইলে আপনি নন এসি বাসেও যেতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার কাছে বেস্ট অপশন মহাখালীগামী বিনিময় পরিবহনের বাস।ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা।সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা।ও হ্যাঁ ধনবাড়ী থেকে সূর্যকান্তের মিষ্টি আর টাঙাইলের চমচম নিতে ভুলবেন না।সাথে পারলে জলছত্র থেকে আনারস নিয়ে নিয়েন।
সরাসরি মধুপুর বাসে ভাড়া নাস্তা সহ ২৪০ টাকা।
✅ দ্বিতীয়_রাস্তা ঢাকা ময়মনসিংহ হয়ে
মহাখালী থেকে ৬:০০ টায় এনা পরিবহনের বাসে উঠে পড়ুন।সকাল ৮:৩০ থেকে ৯:০০ টার মধ্যে ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস স্টেশনে নামিয়ে দেবে।ভাড়া নেবে ২২০ টাকা।এছাড়া সৌখিন সহ শেরপুর,নেত্রকোনার যে কোন বাসে উঠে পড়তে পারেন।সেক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ১২০-১৫০ টাকা।তবে সময় লাগবে ৪-৬। ঘন্টামাসকান্দা বাস স্টেশনে নেমে ৩০/৪০ টাকায় নাস্তা করে নেন।সেখান থেকে অটোরিকশায় চলে আসুন টাংগাইল বাসস্ট্যান্ড।(২০ টাকা ভাড়া)
✅ ট্রেন
সেক্ষেত্রে সকাল ৭:৩০ টায় কমলাপুর তিস্তা এক্সপ্রেস এ ময়মনসিংহের টিকিটে উঠে পড়তে পারেন।তবে তখন আপনি ময়মনসিংহ পৌছাবেন ১০:৩০ থেকে ১১:০০ টায়।সবকিছুই ২ ঘন্টা পিছিয়ে দিন।আর যাওয়ার সময় মধুপুর থেকে ময়মনসিংহ(সময় লাগবে ১.৫ঘন্টা) বাসে গিয়ে সন্ধা ৭:১৫ এর অগ্নিবীণা এক্সপ্রেসে চেপে বসুন।এই ট্রেন আপনাকে ১০:৪০ থেকে ১১:১০ এর মধ্যে কমলাপুর নামিয়ে দেবে।আর বিকেলে সময় পেলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টাও দেখে নিতে পারবেন।
খরচ_
শোভন_১১৫ টাকা
শোভন চেয়ার_১৪০ টাকা
মোট খরচ_২২০+২০+৪০=২৮০(বাসে) টাকা। (ময়মনসিংহ পর্যন্ত)
✅ টাংগাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে মধুপুর বাস ভাড়া ৭০/৫০ টাকা।চলে আসুন মধুপুর বাস স্ট্যান্ড এ।এখান থেকে আপনি চাইলে ২.৫-৩ ঘন্টার জন্য মোটরসাইকেল-সি.এন.জি চালিত অটোরিকশা কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাড়া পাবেন।উপরিউক্ত জায়গাগুলো(ধনবাড়ী নওয়াব বাড়ি ছাড়া) ঘুরে দেখবেন বলুন আর সময় টা জানিয়ে দিন।ভাড়া অনেক চাইবে।ঘাবড়ানোর কিছু নেই।৩০০-৫০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে।এবার শুরু করুন ঘুরে দেখা।চলছে তো চলছেই।
মোট খরচ_৭০+৫০০+(ময়মনসিংহ পর্যন্ত ২৮০)=৮৫০টাকা
✅ মধুপুরে চলে আসুন ৩:০০ টার মাঝে।তারপর তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার সেড়ে নিন ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে।চড়ে বসুন ধনবাড়ীর বাস-লেগুনা-সি.এন.জি তে।ভাড়া নেবে ১০-২০ টাকা।ধনবাড়ী নেমে দ্রুত ভ্যানে করে চলে যান নওয়াব বাড়ি মসজিদের সামনে।ভাড়া ১০-১৫ টাকা।মসজিদ টা দেখুন।চাইলে ৫০ টাকা টিকিট করে নওয়ার বাড়ির ভেতরটাও দেখতে পারেন।আর পাশের নওয়াব আলী চৌধুরির প্রতিষ্ঠিত বিশেষ কারুকার্য সংবলিত ধনবাড়ী নওয়াব ইন্সটিটিউশন স্কুলটাতেও চোখ বোলাতে ভুলবেন না।যাহোক,এ পর্ব খুব দ্রুত সেরে চলে যান ধনবাড়ী বাস স্টেশনে যদি না আপনি এসি বাসে ব্যাক করতে চান।আর তা না হলে একটু সময় নিয়ে দেখতে পারেন।বিকেল ৪টায় ধনবাড়ী থেকে কল্যাণপুরের উদ্যেশ্যে এ.সি. বিনিময় ছেড়ে যায়।টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা। সময় লাগবে ৩.৫থেকে ৪ঘন্টা।এছাড়া চাইলে আপনি নন এসি বাসেও যেতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার কাছে বেস্ট অপশন মহাখালীগামী বিনিময় পরিবহনের বাস।ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা।সময় লাগবে ৫-৬ ঘন্টা।ও হ্যাঁ ধনবাড়ী থেকে সূর্যকান্তের মিষ্টি আর টাংগাইলের চমচম নিতে ভুলবেন না।সাথে পারলে জলছত্র থেকে আনারস নিয়ে নিয়েন।
✅ থাকবেন কোথায়?
দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায় মধুপুর গড় থেকে। তবে আপনি যদি মধুপুরে রাত্রিযাপন করতে চান সেক্ষেত্রে মধুপুর উপজেলা সদরে আবাসিক হোটেল হল-হোটেল আদিত্য, হোটেল সৈকত, হোটেল ড্রিম টাচ ইত্যাদিতে অবস্থান করতে পারেন। এসব হোটেলে ২শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় কক্ষ আছে। এছাড়া মধুপুরের কাছাকাছি থাকার ভালো জায়গা ধনবাড়ি নবাব প্যালেস বাংলো।
এছাড়া পূর্বানুমতি নিয়ে বনবিভাগের কোনো বিশ্রামাগারে থাকতে পারলে আপনার ভ্রমণ পরিপূর্ণ হবে। জাতীয় এ উদ্যানের ভেতরে জলই, মহুয়া, বকুল, চুনিয়া কটেজ ছাড়াও দোখলা বন বিশ্রামাগারে রাত যাপন করতে সহকারী বন সংরক্ষক (উত্তর ০১৯১৪৫১৭২৫৬) অথবা টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কার্যালয় (০৯২১-৬৩৫২৪) থেকে অনুমতি নিয়ে বুকিং নিশ্চিত করতে হবে।
তো আর কি? রাত ৮টা থেকে ১০ টার মধ্যে ঢাকায়….।কেমন ছিলো আপনার মধুপুর গড়ের ট্যুর? স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে বাসায় গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিন।

নোট
✅ বনভূমি ময়লা করবেন না।উচ্ছিষ্টাংশ নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
✅ স্থানীয় লোকজনের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করুন।
✅ বন্য পশুপাখির ক্ষতি হয় এমন সকল কাজ থেকে বিরত থাকুন।
✅ পাহাড়ি জোক হইতে সাবধান।
Leave a Reply